আমাদের জীবন এখন রোবটের মতো হয়ে গেছে। এত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন কাটে যে নিজের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শরীর ও মন দুটোই। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়তে চায় কখনো কখনো। আর এ থেকে শরীর ও মনজুড়ে অবসাদ নেমে আসে।
প্রতিদিনকার ক্লান্তির কিছু সাধারণ কারণ ও তা থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায় এখানে তুলে ধরা হলোঃ
অ্যানিমিয়া ও আয়রনের ঘাটতিঃ
সব সময় ক্লান্তি লাগার কথা বললে চিকিৎসকেরা হয়তো প্রথমেই বুঝতে চাইবেন আপনার শরীরে আয়রন বা লৌহের ঘটাতি আছে কি না। রক্তশূন্যতা সহ নানা কারণেই এই ঘাটতি হতে পারে। খাবারদাবারে যথাযথ পরিমাণে লৌহ না থাকলে এমন দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে মেয়েদের মধ্যেই রক্তশূন্যতা বেশি দেখা গেলেও ছেলেরাও এতে ভুগতে পারে। ঋতুমতী নারীদের অনেকে, বিশেষত কম বয়সী মেয়েরা এমন রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগে।
প্রতিকার: প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি খাওয়া এবং লৌহের ঘাটতি মেটানো এই সাধারণ ক্লান্তি থেকে মুক্তির ভালো উপায়।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমঃ
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ‘সিএফএস’ আরেকটি সাধারণ অসুস্থতা যা থেকে ক্লান্তি লাগতে পারে, দুর্বলতা ভর করতে পারে। এমন সমস্যায় আক্রান্তরা সারা রাত ঘুমালেও পরদিনও তাদের ক্লান্তি দূর হয় না। ঠিক কোন সমস্যা থেকে সিএফএস তৈরি হয় তা বলা মুশকিল। তবে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ভাইরাসের সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এমনকি প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকেও এটা হতে পারে। প্রতিকার: এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোগীর অবস্থাভেদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য অনেক থেরাপিও আছে।
ব্লাড সুগারের ওঠানামাঃ
ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠানামার কারণেও এমন শারীরিক ক্লান্তি তৈরি হতে পারে। ডায়াবেটিসের অনেক উপসর্গের মধ্যে প্রায়ই শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়া অবস্থাও একটি। আর বার বার প্রস্রাব পাওয়া আর তৃষ্ণার্ত হয়ে যাওয়া তো ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ।
প্রতিকার: এমন হয়ে থাকলে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা থেকেই আপনি ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারবেন। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে শুরু করুন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে সহজেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
হতাশা ও বিষন্নতায় ভোগাঃ
কোনো কিছু নিয়ে গভীর হতাশায় ডুবে আছেন? অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে লাগাতার বিষণ্নতায় ভুগছেন? তাহলেও কিন্তু এমন দুর্বলতা আর ক্লান্তি ভর করতে পারে।
প্রতিকার: এমন হলে আপনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। নিজের সমস্যার কথা খুলে বলে তাঁর পরামর্শ নিন। অল্প দিনেই আপনি হয়তো আবার নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করবেন।
শারীরিক ও মানসিক এই ক্লান্তি দূর করতে কিছু সময় নিজের জন্য বের করতে হবে। উপরোক্ত প্রতিকার গুলো ছাড়াও নিচে উল্লেখিত কিছু ঘরোয়া টিপস মেনে চলার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত ঘুম:
সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। এতে করে চনমনে হবে মন ও শরীর। সুস্থ শরীরের জন্যও পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। ঘুম যেন ভালো হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখুন। রাতে বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিন দূরে রাখুন।
একাকী সময় কাটানো:
বহির্মুখী মানুষ যেখানে অনেকের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে, সেখানে যারা অন্তর্মুখী তারা একাকী সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। পুনরায় কাজের উদ্যম ফিরে পেতে তারা একা বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে। এমন হলে নিজের জন্য সময় বের করে নিন।
মানসিক চাপ কমানো:
জীবনে দুশ্চিন্তা থাকাটা স্বাভাবিক, তা যদি বেশি মাত্রায় হয় তবে তা থেকে মানসিক জটিলতা- অর্থাৎ সাইকোসোমাটিক হতে পারে। এর মধ্যে ক্রনিক অবসাদ একটি। এ জন্য প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন। এতে করে ভালো থাকবে মানসিক স্বাস্থ্য।
নিজের শখ পূরণ করা:
আপনি আপনার কাজকে যতই ভালোবাসেন না কেন, বেশি কাজ করা আপনার শরীর ও মন দুটোর জন্যই খারাপ। কাজের পাশাপাশি এমন কিছু করুন, যা আপনি করতে পছন্দ করেন। যা আপনার মনের জন্য থেরাপির মতো কাজ করবে।
বেড়িয়ে আসা:
সব সময় ক্লান্তি বোধ করার কারণ হতে পারে একঘেয়েমি। চেষ্টা করুন প্রিয়জনের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার। এই পরিবর্তন শরীর ও মন দুটোর ওপরই প্রভাব ফেলবে। এর ফলে আপনি কাজে নতুন উদ্দীপনা ফিরে পাবেন।